খোকসায় সুদে কারবারিদের রাম-রাজত্ব
নিজস্ব প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়া খোকসা উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের সামাদ মাষ্টার ও তার পরিবারের কাছে অনেকেই অসহায়। আসল টাকা সহ চার গুণ টাকা ফেরত দিলেও ভুক্তভোগীরা ফেরত পায়না চেক। সেই চেক ডিজঅনার করিয়ে করা হয় মামলা। এতেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, কোটিপতি বনে গেছেন সামাদ মাষ্টার। গ্রামের বাড়ি ছাড়াও কুষ্টিয়া শহরের গড়েছেন বহুতল আলিশান বাড়ি।
কুমারখালী এক পরিবারের আড়াই লক্ষ টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে চেক নিয়ে টাকা না দিয়ে ঘুরিয়ে পরছ উল্টো চেক ডিজঅনারের মামলা ঠুকে দেন সামাদ মাষ্টারের চাচাতো ভাই লতিফ খান। সেই মামলায় জেল হয় কুমারখালী এলঙ্গীপাড়ার শরীফ শেখের। টাকা আনার জন্য শরিফ শেখের ব্যাংকের চেক দিয়েছিলেন শাশুড়ি তহমিনা। আর সেই অপরাধেই তহমিনার মেয়ে সীমা আক্তার কে ডিভোর্স দেয় শরীফ শেখ। সীমা আক্তার এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে এখন দুর্বিষহ জীবন পার করছে।
অপরদিকে সামাদ মাস্টার এর আর এক চাচাতো ভাই আলতাফ খানের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নেয় রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার যশাই গ্রামের নার্গিস সুলতানা। সেই টাকা ১০ লক্ষ টাকা সুদ দেয়ার পরেও চেক ফেরত দেয়নি আলতাফ খান। পরে নার্গিস সুলতানা বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা ঠুকে দেন আলতাফ খান। সেই মামলায় জেল হয় নার্গিস সুলতানার। নার্গিস সুলতানা শাশুড়ি রিজিয়া খাতুন জানান, আলতাফ খার সুদের টাকা শোধ দিতে গিয়ে গরু জমি গাছ সব হারিয়ে প্রায় পথে বসতে বসেছেন তিনি। নার্গিস সুলতানার ১২ বছরের ছেলে রনক মা জেলে ও বাবা বিদেশ থাকার কারণে অনেকটাই মা বাবা হারা ভাবে চলাফেরা করছে।
সামাদ মাষ্টারের কাছ থেকে প্রতিবেশী কৃষক ইউনুস মিয়া ৩০ হাজার টাকা স্ত্রীর নামে ব্যাংক চেক দিয়ে নেয়। সেই টাকা পরে ৮০ হাজার দেন কিন্তু লোভী সুদেল সামাদ মাষ্টার তাতেও সন্তুষ্ট নয়। কি সব ইউনুস মিয়া স্ত্রীর নামে ঠুকে দেন চেক ডিজঅনার মামলা। সেই মামলা থেকে বাঁচতে পরে আরও ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে ইউনুস মিয়া কে।
ইউনুস মিয়া জানান, টাকা নেয়ার সময় সামাদ মাস্টার একটি টাকার অংক ও নাম না বসিয়ে চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আমি ৮০ হাজার টাকা দেয়ার পরেও সে বলে যদি আরও ৪০ হাজার টাকা না দিস তাহলে এখানে ২ লক্ষ টাকা বসিয়ে তোর স্ত্রীর নামে মামলা করে দেবো। একপ্রকার বাধ্য করেই আমার কাছ থেকে আরও ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় লোভী সামাদ মাস্টার। শুধু তাই নয় এরশাদ আলী লতিফ খানের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নেয়। পরে সেই টাকা শোধ করতে হয় ৬০ হাজার টাকা দিয়ে।
কুষ্টিয়া খোকসা উপজেলার আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ গ্রামের আব্দুল সামাদ খান মাষ্টার, তার চাচাত ভাই আলতাফ খান, লতিফ খান ও শহিদুল ইসলাম খান এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের শ্রী নারায়ন চক্রবর্তী মাষ্টার এই সুদের কারবার এর সাথে জড়িত।
আমবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, স্বাধীনের পর থেকেই এরা সুদের কারবার করে আসছে। এদের কারণেই শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ মানুষ এই সুদের কারবারিদের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছে অনেকে এখনো জেল খাটছে।আব্দুস সামাদ মাস্টার খোকসা উপজেলার আমলাবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং শ্রী নারায়ন চক্রবর্তী একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক।এমন প্রতারণার শিকার শুধু সাধারণ মানুষই নয় একজন সাবেক ব্যাংক ম্যানেজার গোলাম রসুলকেও কেউ ছাড় দেয়নি সুদেল নারায়ণ চক্রবর্তী। গোলাম রসুল জানান, নারায়ন চক্রবর্তীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে নারায়ন চক্রবর্তী মাঝেমধ্যে তার বাসায় আসতো। এরই কোন এক ফাঁকে নারায়ণ চক্রবর্তী আমার বাড়ি থেকে একটি চেক বই চুরি করে নিয়ে যায়। সেই বইয়ে চারটি পেজ ছিল যার একটিতে স্বাক্ষর করা ছিল। আমি আমার চেক বই কোথাও খুঁজে না পেয়ে পরবর্তীতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। চেক বই হারিয়ে যাওয়ার তিন দিনের মাথায় খোকসা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে গোলাম রসুল। যার সাধারণ ডায়েরি নং-১১৮, তারিখ ০৪/১০/২০১৬ইং। এর এক বছর দুই মাস পর নারায়ণ চক্রবর্তী কোর্টে একটি চেক ডিজঅনার মামলা করে দেন। গোলাম রসুলের দাবি তাকে পরিকল্পিতভাবে চেকের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এই মামলায় গোলাম রসুলের এক বছরের জেল এবং জরিমানা হয়। পরবর্তীতে সাড়ে চার লক্ষ টাকা জমা দিয়ে জামিন নেন গোলাম রসুল। গোলাম রসুল আরো জানান, যদি লাখের উপরে কোন অংকের চেক ব্যাংকে আসে তবে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার কে ফোন দিয়ে জানাতে হয়। কিন্তু নয় লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার করল আমাকে কোন কিছু না জানিয়েই। আমাকে না জানিয়ে চেক ডিজঅনার করার কথা নয়। প্রথমে দুই বার আমাকে জানাবে পরবর্তীতে আমি কোন রেসপন্স না করলে তৃতীয়বারে সে চেক ডিজঅনার করতে পারে।
এ বিষয়ে একতারপুর সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শাখা বর্তমান ম্যানেজার সোহেল রানার কাছে চেক ডিজঅনার অ্যাকাউন্ট হোল্ডার কে না জানিয়ে কিভাবে করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে গোলাম রসুলের ফোন নাম্বারটা ছিলো না।নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, আমার কাছ থেকে চেক দিয়ে গোলাম রসুল টাকা নিয়েছিল। এখন গোলাম রসুল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।সামাদ মাষ্টার বলেন, আমি সুদের কোন কারবার করিনি। এদিকে এই সুদের বিরুদ্ধে “মহাজন চেকের ফাঁদ” জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক মিডিয়া যমুনা টেলিভিশনে টিম ৩৬০ ডিগ্রীতে প্রচার করা হয়।ভুক্তভোগীরা ওইসব সুদে কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।