জাফর আহম্মেদ, নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি:
বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। আগের মত শক্তি নেই শরীরে। গায়ের চামড়া ভাজঁ পড়ে গেছে। মাথার চুল গুলো পেকে গেছে। জীবিত নেই স্বামী।মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। ছেলেরা বিয়ে করে বউয়ের বাড়ি জামাই চলে গেছে। মেয়েরা বাড়িতে থাকলেও স্বামী সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে।সবাই কৃষি শ্রমিক।বছরের বেশি সময় কৃষি কাজ থাকে না। তাই বেকার দিন কাটে তাদের প্রায় সময়ই। একবারেই নি¤œ আয়ের মানুষ। অল্প আয়ে সংসার চলে । সন্তানেরা নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত।তাই মায়ের খোজ খবর নিচ্ছে না অনেক সন্তান। তবুও বেচেঁ থাকতে হবে , জীবন যুদ্ধ চলছে তাদের,অনাহারে,অর্ধাহারে।জীবনের শেষ প্রান্তে চলে গেছে তাদের বয়স।
ভাগ্যে জুটেনি তাদের এখনও বয়স্ক ভাতা ,বিধবা ভাতা,প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। অপর দিকে জাতীয় পরিচয় পত্রে রয়েছে তাদের জন্ম তারিখে ভুল তথ্য।বয়স তাদের ৮০ উর্দ্ধে হলেও। জাতীয় পরিচয় পত্রে এখনো ৬৫ বছর হয়নি। পাহাড় বেষ্টিত গ্রাম পানিহাতা ফেকামারী।এখানেই বাস করে ক্ষুদ্র নৃতাত্¦িক গোষ্ঠীর গারো সম্প্রদায়ের প্রায় ৫৫ টি পরিবার। এ পরিবার গুলোতে বয়সে বৃদ্ধ প্রায় ১২-১৪ জন মানুষ অসহায় জীবন যাপন করলেও সহযোগীতার হাত কেউ বাড়ায়নি।নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে গারো পাহাড়ের অভ্যন্তরে ভারতের সীমা ঘেষা রামচন্দ্রকুড়া মন্ডলিয়াপাড়া ইউনিয়নের পানিহাতা ফেকামারী গ্রাম।
গ্রামে ঢুকতেই দৃষ্টি যায় বৃদ্ধ বয়সের এই মানুষ গুলোর দিকে। সময় নিয়ে শুনি তাদের জীবন সংগ্রামের গল্প।বুক ভরা কষ্ট নিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তারা বলে,এখন আমরা কি করবো,কর্মনেই,সন্তানেরা ব্যস্ত নিজ সংসার নিয়ে আগের মত গায়ে জোর নেই ,কাজও করতে পারি না,সরকারের বয়স্ক ভাতা প্রতিবন্ধী ভাতা,বিধবা ভাতার কার্ডও দিচ্ছেন চেয়ারম্যান মেম্বাররা।বল মনি সাংমার বয়স ১০০ বছরের উপরে,স্বামী পরপারে চলে গেছে ৬-৭ বছর আগে।
তার তিন পুত্র জামাই চলে গেছে।তাছাড়া বিলাস মনি সাংমা তার বয়স ৮৫ বছর। চঞ্চলা মারাক ৮২ বছর। প্রেমা মারাক ৯০ বছর। নিমিতা চিসাম ৭৫ বছর।দু:খ জনক ব্যাপার হলো এদের ভোটার তালিকা করার সময় জাতীয় পরিচয় পত্রে তথ্যে জন্ম তারিখ প্রত্যেক এর বয়স কম দেখানো হয়েছে ৩০-৪০ বছর।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার বলেন, পরিষদের বৈষম্য মূলক আচরণে মূলত গারোপাড়া সুবিধা বঞ্চিত। রামচন্দ্র কুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোকা বলেন , সত্যি অবাক হয়েছি এদের বয়স ৮০ উপরে হলেও ভোটার আইডি কার্ডের বয়স কম। আমার ইউনিয়নে কম বয়সে ব্যাক্তিদের ভোটার আইডি কার্ডে বয়স বেশি থাকার কারণে অনেকে বয়স্ক ভাতা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে আমি নিজে গিয়েও কোন সমাধান করতে পারি নাই। যে কারণে আমি বয়স্ক ভাতা দিতে পারছিনা।