আফজাল হোসেন,কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধিঃ

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্যা মোকাররম হোসেন হিরুর বিরুদ্ধে সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের কাছ থেকে বসতবাড়ির কর আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া চৌকিদারসহ বহিরাগত লোক নিয়োগ করে চাপের মুখে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ৩ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কর আদায় করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এই কর আদায়ের ঘটনায় ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চাপাইল গ্রামের সর্বচেনা এক ভিক্ষুকের নাম মিরাজ খন্দকার। ভিক্ষুক মিরাজের বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে গ্রামের বাসিন্দারা এক নামেই তার বাড়ি চিনিয়ে দিলেন। মিরাজ রোজগারের জন্য বাইরে থাকায় তার দেখা না পেলেও দেখা মেলে তার স্ত্রী বিনা বেগমের সাথে। তিনি জানান, কয়েকদিন আগে স্থানীয় চৌকিদার কওছারের সাথে অপরিচিত ২ জন লোক এসে ১০০ টাকা কর আদায় করে নিয়েছে। একই গ্রামের মৃত আয়েন উদ্দিনের ছেলে বশির মিয়া অভিযোগ করে বলেছেন, বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ২ শতক বসত ভিটা ছাড়া তার আর কিছুই নেই। অন্যের জমিতে জন বিক্রি করেই তার সংসার চলে। চেয়ারম্যানের লোকেরা মামলার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা কর আদায় করে নিয়েছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা তিন ভিক্ষুক বাক প্রতিবন্দি আফরোজা বেগম (৬০) কচি বেগম (৫৫) ও কমরোন নেছা (৫০)। তারা একই মায়ের তিন কন্যা সন্তান। এর মধ্যে কচি এক সন্তানের মা হলেও স্বামী নেই। বাকি দুই বোনের ভাগ্যে বিয়ের ফুল ফোটেনি। এলাকায় তারা সকলেই ভিক্ষকু বলে পরিচিত। বসতবাড়ির ২ শতক পৈত্রিক জমি ছাড়া তাদের কিছুই নেই। বড় বোন বাক প্রতিবন্দি আফরোজার নামে রয়েছে সরকারি দুস্থ্য ভাতার ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির কার্ড। সরকারি সাহায্য ও ভিক্ষাবৃত্তি করে কোন রকমে চলছে তাদের জীবন যাত্রা। কিন্তু চেয়ারম্যানের করের তালিকা থেকে তারাও বাদ পড়েনি। চেয়ারম্যানের ভাড়াটিয়া লোক ও চৌকিদার কওছার ৩০০ টাকা কর আদায় করতে ২ বার তাদের বাড়িতে এসেছে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় করের টাকা বাবদ ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কেটে নেয়ার হুমকি দিয়ে গেছে কর আদায়কারিরা বলে তারা অভিযোগ করেছেন। তারা এখন সরকারি সাহার্য্যের চাল কেটে নেয়ার আতংকে ভূগছেন।
ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের রুবেল শিকদার, লবা শিকদার, বাগুডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রহিমসহ অনেকেই এই কর আদায়ের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশসহ অভিযোগ করে বলেছেন, কোন প্রচার প্রচারনা বা আপিলের সুযোগ না দিয়েই প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে অতীতের তুলনায় ৩ থেকে ৫ গুন বেশী হারে কর আদায় করা হচ্ছে। আর্থিক অবস্থা নয়, মুখ দেখে কর ধরা হয়েছে। আর তাদের ধার্য্যকৃত টাকা না দিলে মামলা দায়েরের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।।
কর আদায়ের কাজে নিয়োজিত বহিরাগতদের একজন হৃদয় বলেছেন, এই ইউনিয়নে কর আদায়ের জন্য তাদের ১০ জনকে নিয়োগ করেছেন চেয়ারম্যন। পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. আজাহার উদ্দিন বলেছেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বররা বসতবাড়ির কর আদায়ের জন্য আদায়কৃত করের টাকার শতকরা ১৫ টাকা কমিশন দেয়ার শর্তে ওইসব বহিরাগত লোক নিয়োগ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক অবস্থা বুঝে একবাড়ি থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা কর আদায়ের সরকারি বিধান রয়েছে। কাকে কি পরিমান কর ধরা হয়েছে তা তিনি বলতে পারেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পহরডাঙ্গা ইউপির চেয়ারম্যান মোল্যা মোকারম হোসেন হিরু বলেন, এর আগে বহিরাগত লোক নিয়োগ করে উপজেলার সালামাবাদ ও ইলিয়াছাবাদসহ কয়েকটি ইউনিয়নে একই কায়দায় বসতবাড়ির কর আদায় করেছেন চেয়ারম্যানরা। তাই তিনিও একই কায়দায় কর আদায় করছেন। সরকারি নিয়মের বাইরে কারো কর নির্ধারন করা হয়নি। অতিরিক্ত কর আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছরের বকেয়া থাকলে সে ক্ষেত্রে বেশী টাকা আদায় হতে পারে। ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রের কাছ থেকে করের টাকা আদায় করা হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। ঘটনাটিতে তিনি খোজ নেবেন।
কালিয়ার ইউএনও মো. নাজমুল হুদা বহিরাগত লোক নিয়োগ করে কর আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, হতদরিদ্র ও ভিক্ষুকদের কাছ থেকে কর আদায়সহ অতিরিক্ত কর আদায়ের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তিনি খোজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।।