মউসুমা শেখ
আজ অনুজার মন ভালো নেই।সঠিকভাবে বলতে গেলে অবশ্য বলতে হবে মেজাজ ভালো নেই।মেজাজ ভালো না থাকা অনুজার জীবনের কোন দুর্লভ ঘটনাও নয়।খুটিনাটি বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে ঝগড়া লেগেই রয়েছে।এই তো আজকের ঘটনাটাই ধরা যাক।সবে অনুজা এক বন্ধুর বার্থডে পার্টি থেকে ফিরেছে।ড্রেস চেন্জ করেই অনুজা বসেছিল বার্থডে পার্টির ছবিগুলো দেখতে।উদ্দেশ্য কিছু ভালো ছবি নির্বাচন করে পোস্ট দেওয়া।এর মাঝে মা এসে হাজির।আর সাথে সাথেই শুরু মায়ের বকাঝকা।“বাইরে থেকে ঘুরে এসেই মোবাইল নিয়ে বসতে হবে?সারাদিন যে এক অক্ষরও পড়া হয়নি সে খেয়াল আছে?তুমি যা খুশি তাই কর আর তোমার জন্য আমি খেটে মরি!”অনুজাও চুপ থাকার পাত্রী নয়।সেও চিৎকার করে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেয়।তারপর মা বরাবরের মতোই গজগজ করতে করতে চলে যায়।
অনুজা বসে বসে ভাবতে থাকে-“মা আমাকে একেবারেই বুঝতে চায় না।ক্লাস ম্যাইনটেইন বলে যে একটা ব্যাপার আছে তাই মানতে চায় না।এই তো সেইদিন ফ্রেন্ডদের সাথে হ্যাং আউটে গেলাম।মা অফিস থেকে ফেরার সময় আমাকে নিয়ে আসতে গেল।আর যেয়েই কেমন ক্ষ্যাত টাইপের কথা বলতে থাকল।উফ!আমার ফ্রেন্ডরা আমার ফ্যামিলি নিয়ে কী যে ভেবেছে ওনলি গড নোজ।”
ঐ দিকে অনুজার মা বসে বসে ভাবতে থাকে-“মেয়েটা কী আমার কষ্ট কখনোই বুঝবে না?আমাকে যে ওর বাবা মারা যাওয়ার পর একা হাতে কত কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় সে খবর কী ও রাখে?শুধু তো আছে এক ফোন নিয়ে।আমার সাথে দুটো কথা বলার সময়ও হয়না।”
পাশের বাসার আন্টি ঘুরতে আসলে অনুজার মা গল্পের ছলে অন্যের নিন্দা করতে বসে যায়।এরপর বাড়িওয়ালা চাচা এসে ভাড়া দেরিতে দেওয়া নিয়ে রাগ দেখিয়ে যায়।অনুজার মনে হয়- “আমি তো এই অসহ্যকর পরিবেশ থেকে দূরে থাকার জন্যই অতি মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করি।আমার আর দোষ কোথায়?”শুধুমাত্র এই একটি কারণই তার কাছে আসল বলে মনে হয়।
পরদিন আবার সব স্বাভাবিক হয়।মা কিংবা মেয়ে কারোরই মনের কথাগুলো খোলাখুলি বলা হয়ে উঠে না।কথাগুলো আবারও পরে কোন অভিমানের মুহুর্তে মনে পড়ে।অভিমান বা রাগ গাড়তর হয়।এমনটা চলতে চলতে কখন যে দূরত্বটা বেড়ে যায় কেউই ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেনা।