×

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিলে মস্তিষ্কে যেসব পরিবর্তন ঘটে



সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি: কীভাবে মুক্তি পাবেন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করবেন?

আপনি কি ফোনে স্ক্রল করতে গিয়ে খুব বেশি সময় ব্যয় করছেন? আপনি একা নন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান প্রতিদিন গড়ে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটান। কিশোরদের ক্ষেত্রে এটি দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞরা এ আসক্তি থেকে মুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করছেন।

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি: একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০২৪ সালের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হিসেবে 'ব্রেইন রট' নির্বাচন করেছে, যা আমাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।

ডোপামিন ন্যাশনের লেখক ড. অ্যানা লেম্বকি বলেন, "সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মস্তিষ্কের পুরস্কার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে আসক্তি তৈরি করে। প্রতিটি লাইক, কমেন্ট বা আকর্ষণীয় ভিডিও ডোপামিনের প্রবাহ সৃষ্টি করে, যা আমাদের আনন্দ দেয়। তবে এই প্রবাহ ভারসাম্যহীন হলে ডোপামিন ঘাটতি দেখা দেয়।"

সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স: ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা

গুগলের 'সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স' অনুসন্ধানের হার ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া প্রমাণ করে যে মানুষ এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে আগ্রহী। গবেষণায় দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরত থাকার ফলে আত্মসম্মান বৃদ্ধি, মানসিক চাপ কমানো এবং ঘুমের মান উন্নত হতে পারে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরা মাত্র তিন দিনের বিরতিতে শরীর নিয়ে লজ্জাবোধ কমানোর পাশাপাশি আত্মসম্মান বাড়িয়েছে।

ডিটক্সের সময় যেভাবে মানসিক চাপ সামলাবেন

সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স শুরুর প্রথম কয়েকদিন কঠিন হতে পারে। এ সময় আপনার মস্তিষ্ক ডোপামিনের নিম্ন স্তরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করবে, যার ফলে তীব্র আকাঙ্ক্ষা বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। তবে গবেষণা বলছে, ধৈর্য ধরে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড পাথওয়েগুলো পুনর্গঠিত হয়।

ডিটক্সের সঙ্গী যুক্ত করুন

ডিটক্সকে সহজ করতে বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হন। কলোরাডো কলেজের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে আরও কম একাকিত্ব অনুভব করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করুন

ডিটক্স শেষে অতিরিক্ত ব্যবহার এড়াতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন। যেমন, শোবার ঘরে ফোন না রাখা, নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা। বাদ্যযন্ত্র বাজানো, রান্না করা বা বই পড়ার মতো কাজ মনোযোগ ধরে রাখার পাশাপাশি ধীরে ধীরে ডোপামিন নিঃসরণে সহায়তা করে।

চূড়ান্ত পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা বছরে একাধিকবার সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নেওয়ার পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেন। এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার এবং তার প্রভাব পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি করবে। ড. সারাহ উডরফ বলেন, "এই বিরতিগুলো আপনাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।"

উপসংহার সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স কেবল মস্তিষ্কের পুরস্কার ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করে না, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও কার্যকর। তাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করুন এবং একটি স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল জীবনযাপন শুরু করুন।




Post a Comment

0 Comments